🇮🇳 ভারতের ১৫ জন বিস্মৃত বীর – স্বাধীনতার পিছনের নামহীন সংগ্রামীদের গল্প
ভারতের স্বাধীনতা কোনও একদিনে আসেনি। লাখ লাখ মানুষের আত্মত্যাগ, অজানা নাম, হারিয়ে যাওয়া গল্প — এই সবকিছু মিলেই আজকের স্বাধীন ভারত। আমরা গান্ধীজি, নেতাজি, ভগৎ সিংহের নাম জানি। কিন্তু এমন অনেক যোদ্ধা আছেন, যাঁদের অবদান ছিল অবর্ণনীয়, অথচ তাঁদের নাম কেউ জানে না। আজকে জানবো এমন ১৫ জন সংগ্রামীর জীবন, যাঁরা ইতিহাসের পাতায় হারিয়ে গেলেও, হৃদয়ের পাতায় লেখা থাকা উচিত।
-
খুদিরাম বসু (১৮৮৯–১৯০৮):
মাত্র ১৮ বছর বয়সে ফাঁসির মঞ্চে উঠেছিলেন। কিংসফোর্ড হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেফতার হন। মৃত্যুর মুখেও হাসিমুখে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, “আমি দেশের জন্য মরেছি – এটা আমার গর্ব।” -
মাতঙ্গিনী হাজরা (১৮৭০–১৯৪২):
৭২ বছর বয়সেও হাতে জাতীয় পতাকা নিয়ে "ভারত ছাড়ো" আন্দোলনে রাস্তায় নামেন। পুলিশের গুলিতে শহীদ হন কিন্তু পতাকা পড়তে দেননি। -
বিনয় বসু, বাদল গুপ্ত ও দীনেশ গুপ্ত (১৯০০–১৯৩১):
একসাথে রাইটার্স বিল্ডিং আক্রমণ করেন। ব্রিটিশ অত্যাচারীদের দমন করতে নিজের জীবন উৎসর্গ করেন। দীনেশ ও বিনয় ফাঁসিতে ঝুলেন, বাদল নিজেই বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেন। -
আশফাকউল্লা খান (১৯০০–১৯২৭):
হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের প্রতীক। কাকোরি ট্রেন লুটে অংশগ্রহণ করে ধরা পড়েন এবং ফাঁসিতে ঝোলেন। মৃত্যুর আগে বলেছিলেন, "দেশের জন্য মরছি, সেটাই সার্থকতা।" -
ঝালকরি বাঈ:
রানি লক্ষ্মীবাইয়ের দেহরক্ষী ও ছদ্মবেশী যোদ্ধা। তাঁর বুদ্ধিমত্তা ও সাহসে ব্রিটিশদের চোখে ধুলো পড়েছিল বহুবার। নারীদের সাহসের প্রতীক তিনি। -
অরুণা আসফ আলি (১৯০৯–১৯৯৬):
১৯৪২ সালে মুম্বাইয়ের কংগ্রেস অধিবেশনে পতাকা উত্তোলন করে পুলিশের নজরে আসেন। এরপর আত্মগোপনে থেকেই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। তাঁকে বলা হয় ‘গ্র্যান্ড ওল্ড লেডি অব ইন্ডিয়ান ফ্রিডম’। -
রাম প্রসাদ বিসমিল:
বিপ্লবী কবি ও কাকোরি ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম নেতা। তাঁর লেখা “সরফরোশি কি তামান্না” আজও গাইতে গাইতে বহু দেশপ্রেমিক জীবন উৎসর্গ করেন। -
ভূপেন্দ্র নাথ দত্ত:
স্বামী বিবেকানন্দের ভাই। সাংবাদিকতা, বিপ্লব ও চিন্তাধারায় ছিলেন অগ্রগামী। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে কলমে বিপ্লব করেছেন। -
উদ্যমাসেন (Udyam Singh):
১৯৪০ সালে লন্ডনে গিয়ে ব্রিটিশ অফিসার মাইকেল ও'ডায়ারকে হত্যা করেন। জালিয়ানওয়ালা বাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ হিসেবে এই কাজ করেন। -
রুক্মিণী লক্ষ্মীপথি:
দক্ষিণ ভারতের অন্যতম নারী সংগ্রামী। প্রথম মহিলা অ্যাডভোকেটদের মধ্যে অন্যতম। আন্দোলনে অংশগ্রহণের জন্য বহুবার গ্রেফতার হন। -
সুভাষিনী মিস্ত্রী:
স্বামী মারা গেলে রাস্তায় ঝাড়ু দিয়ে টাকা জমিয়ে হাসপাতাল তৈরি করেন। স্বাধীনতার পরে দেশের সেবায় যাঁর অবদান অনবদ্য। -
গোপাল কৃষ্ণ গোখলে:
গান্ধীজির গুরু। নৈতিক রাজনীতির প্রবক্তা। ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুক্তিবাদী ও শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের পথ দেখান। -
শহীদ তিরুথি মুন্নুস্বামী:
দক্ষিণ ভারতের এক অজানা বীর। ব্রিটিশের বিরুদ্ধে গোপন অস্ত্র ও তথ্য সরবরাহ করতেন। পুলিশের গুলিতে শহীদ হন। -
প্রীতম কৌর:
পাঞ্জাবের নারী সংগ্রামী। ব্রিটিশদের নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েও মুখ খোলেননি। সাহসিকতার প্রতীক। -
বীরভদ্র প্যাটেল:
গুজরাটের সাহসী বিপ্লবী। আন্দোলন চলাকালীন বহু গোপন মিশনে অংশ নেন। ব্রিটিশ পুলিশ তাঁকে বহুবার ধরতে ব্যর্থ হয়।
🧠 উপসংহার
এই সংগ্রামীদের অনেকেই পাঠ্যবইয়ের পাতায় নেই। কিন্তু তাঁদের রক্ত, সাহস, আত্মত্যাগ আমাদের স্বাধীনতার মূলে। তাঁদের ইতিহাস জানানো আমাদের দায়িত্ব।
👉 এই পোস্টটি শেয়ার করুন, যাতে আমাদের নতুন প্রজন্ম তাঁদের চিনতে পারে।
📢 আরও দেশপ্রেমিক ও তথ্যভিত্তিক পোস্ট পড়তে ভিজিট করুন: www.sarkarnews24.in
✍️ লিখেছেন: Manoranjan Sarkar | 📅 July 2025
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন